মেছতা কেন হয়? জানুন দূর করার ঘরোয়া উপায়
![]() |
| মেছতার কারণ এবং ঘরোয়া সমাধান জানুন – ত্বক হবে উজ্জ্বল ও দাগমুক্ত! |
দাগহীন, নিখুঁত, ঝকঝকে ত্বক কে না চায়? তাইতো রূপচর্চায় হাজার হাজার টাকা খরচ করেন অনেকে। ফেশিয়াল, স্ক্রাবিং, স্টিমিং আর কত কিছুই না করান কোমল ও মোলায়েম ত্বক পেতে।
তবুও, অনেকের ত্বকে গাঢ় বাদামি ছোট ছোট দাগ দেখা যায় নাকের পাশে, গালে, কপালে কালচে ছোপ। একে বলা হয় মেছতা বা মেলাজমা দাগ।
ভয় পাওয়ার কিছু নেই মেছতা কোনো রোগ নয়, ছোঁয়াচে কোনো সমস্যা নয়। সঠিক সময়ে যত্ন নিলে, সহজেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মেছতা কি?
মেছতা বা Melasma হলো ত্বকের গাঢ় বাদামি বা ধূসর রঙের দাগ যা মুখের বিভিন্ন অংশে দেখা যায় বিশেষ করে কপাল, গাল, নাকের পাশে এবং ঠোঁটের উপরের অংশে। এটি কোনো রোগ নয়, বরং ত্বকের পিগমেন্টেশনের সমস্যা, অর্থাৎ ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন জমে এই দাগ তৈরি হয়।
মেছতা কেন হয়?
মেছতা হওয়ার সঠিক কারণ পুরোপুরি জানা না গেলেও কিছু প্রধান কারণ আছে:
হরমোনের পরিবর্তন:
গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ, বা হরমোন চিকিৎসার কারণে ত্বকে মেলানিনের উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে।
সূর্যের অতিরিক্ত বিকিরণ (UV রশ্মি):
সরাসরি সূর্যের আলোতে দীর্ঘ সময় থাকা বা সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা দাগ তৈরি করতে সাহায্য করে।
জিনগত প্রবণতা:
পরিবারের কারও ত্বকে মেছতা থাকলে ঝুঁকি বেশি।
ত্বকের ক্ষতি বা প্রদাহ:
ফেসিয়াল, র্যাস, বা ত্বকে যেকোনো ছোটখাটো ক্ষতি ও প্রদাহ মেলানিন বৃদ্ধি করতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য প্রভৃতি ত্বকের স্বাস্থ্য খারাপ করতে পারে।
লক্ষণ:
-
মুখে অস্পষ্ট, অসমান বা ধূসর/বাদামি দাগ।
-
স্পর্শ করলে কোনো ব্যথা বা চুলকানি নেই।
-
সাধারণত দুই পাশের গাল, কপাল, নাকের উপরের অংশে হয়।
রাখার যত্ন ও প্রতিকার:
সূর্য থেকে সুরক্ষা
SPFযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নির্দিষ্ট স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট
হালকা রেটিনল, ভিটামিন সি সিরাম বা হালকা ব্লিচিং ক্রীম।
ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ
কখনো কখনো কেমিক্যাল পিল, লেজার বা মাইক্রোনিডলিং প্রয়োজন হতে পারে।
হালকা ও নিয়মিত ত্বকের পরিচর্যা
রেগুলার ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং ও হালকা এক্সফোলিয়েশন।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
-
মেছতা রোগ নয়।
-
এটি ছোঁয়াচে নয়, তাই সামাজিকভাবে কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
-
সঠিক যত্ন ও ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক সময় পুরোপুরি বা প্রায় পুরোপুরি দূর করা সম্ভব।
মেছতার দাগ দূর করার উপায়
১. টকদই ও মধু:
টকদই, মধু, টকদই ও মধু সমান পরিমাণে মিশিয়ে মুখের মেছতার দাগে লাগান। হালকা হাতে ১৫–২০ মিনিট মাসাজ করুন। এরপর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টকদইয়ের বদলে অ্যালোভেরার জেলও ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত ব্যবহার করলে দাগ হালকা হতে সাহায্য করে।
২. লেবুর রস ও চিনি:
উপকরণ: লেবুর রস, চিনি, লেবুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে মেছতার দাগে লাগান। হালকা হাতে ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না চিনি দানা গলে যায়। ধুয়ে ফেলুন এবং প্রয়োজনে সপ্তাহে ২–৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা: সংবেদনশীল ত্বকে প্রথমে ছোট এলাকায় পরীক্ষা করুন।
৩. আপেল সিডার ভিনেগার ও পানি
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, পানি, অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে তুলো দিয়ে মুখে লাগান। ২০–৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে মেছতার দাগ হালকা হতে সাহায্য করে।
৪. হালকা গরম তেল
ত্বকে ব্যবহার উপযোগী যেকোনো তেল, তেলটি হালকা গরম করে মুখে মাসাজ করুন। যতক্ষণ না ত্বক তেল শুষে নিচ্ছে, ততক্ষণ ঘষুন ঘণ্টাখানেক পরে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে মেছতা দূর হয় এবং ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হয়।
৫. সানস্ক্রিন ব্যবহার
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। বাইরে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান। রোদে বের হলে ছাতা, মাস্ক ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
সতর্কতা: মেছতার দাগ দূর করতে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ক্রিম, সাবান বা ওষুধ ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
