নিটেড ফ্যাব্রিক (Knitted Fabric) ও ওভেন ফ্যাব্রিক (Woven Fabric) এর মধ্যে পার্থক্য

নিটেড ফ্যাব্রিক (Knitted Fabric) ও ওভেন ফ্যাব্রিক (Woven Fabric) এর মধ্যে পার্থক্য?

নিটেড ফ্যাব্রিক (Knitted Fabric) ও ওভেন ফ্যাব্রিক (Woven Fabric) এর মধ্যে পার্থক্য?
নিটেড ফ্যাব্রিক ও ওভেন ফ্যাব্রিক — গঠনের ভিন্নতা, ব্যবহারে পার্থক্য।

নিটেড ফ্যাব্রিক ও ওভেন ফ্যাব্রিকের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো গঠন এবং ব্যবহার পদ্ধতি।

নিটেড ফ্যাব্রিক:

নিটেড ফ্যাব্রিক তৈরি হয় সুতোয়ের লুপ বানিয়ে, যা বেশি ইলাস্টিক ও নরম হয়। এটি সাধারণত টি-শার্ট, সোয়েটার, এবং স্পোর্টসওয়্যারে ব্যবহৃত হয়।

  • এটি এমন একটি কাপড় যা একটানা সুতা থেকে গুলকুলির মতো (loops) তৈরি হয়। প্রতিটি লুপ পরের লুপের সাথে যুক্ত থাকে। সহজ কথায়, সুতা বৃত্তাকার বা ঢেউয়ের মতো গাঁথা হয়।

  • নিটেড ফ্যাব্রিক তার নমনীয়তা ও আরামদায়কতার কারণে বিশেষ করে ক্যাজুয়াল ও স্পোর্টস পোশাকে ব্যাপক ব্যবহার হয়। তবে এটি যথাযথ যত্ন না নিলে সহজে ঝরঝরে বা ছিঁড়ে যেতে পারে।

  • নিটেড ফ্যাব্রিক হলো এমন এক ধরনের কাপড় যা সুতা থেকে গুলকুলির (Loops) মাধ্যমে তৈরি হয়। এই গুলকুলি পরপর একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে এবং কাপড়ে নমনীয়তা ও প্রসারণশীলতা (Elasticity) প্রদান করে।

নিটেড ফ্যাব্রিকের প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  • নমনীয় ও প্রসারণশীল:
    গুলকুলির কাঠামোর কারণে ফ্যাব্রিকটি সহজেই প্রসারিত এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

  • আরামদায়ক:
    এই ফ্যাব্রিক শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নেয়, তাই এটি পোশাক তৈরিতে বেশি আরামদায়ক হয়।

  • শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্যতা (Breathability):
    ফ্যাব্রিকের গঠন সহজ বাতাস চলাচল করতে দেয়, ফলে এটি গরমে পরার জন্য উপযুক্ত।

  • ছিদ্রযুক্ত গঠন:
    গুলকুলির মাঝে ছোট ছোট ফাঁক থাকে, যা ফ্যাব্রিককে হালকা ও নরম করে।

  • ঝরঝরে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি:
    অন্য ফ্যাব্রিকের তুলনায় কিছু বেশি ঝরঝরে বা টান পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

ওভেন ফ্যাব্রিক:

ওভেন ফ্যাব্রিক তৈরি হয় দুটি সেট সুতোকে ক্রস করে বয়নের মাধ্যমে, যা শক্ত ও টেকসই হয়। এটি শার্ট, প্যান্ট, স্যুট ইত্যাদিতে বেশি ব্যবহৃত হয়।

  • এটি এমন কাপড় যা দুই বা তার বেশি সুতা একে অপরের সাথে ক্রস করে বোনা হয়। সাধারণত উলম্ব (warp) এবং আনুভূমিক (weft) সুতা একসাথে বাঁধা থাকে।

  • ওভেন ফ্যাব্রিক হলো কাপড়ের এমন একটি ধরণ যা দুই বা ততোধিক সুতা (Threads) একে অপরকে ক্রস করে বোনা হয়। এই সুতা সাধারণত দুই দিক থেকে থাকে — একটি উলম্ব দিক (Warp) এবং আরেকটি আনুভূমিক দিক (Weft)। এই ক্রসিং প্যাটার্নের মাধ্যমে কাপড়ের শক্তপোক্ততা ও টেকসই গঠন তৈরি হয়।

  • ওভেন ফ্যাব্রিক তার শক্তপোক্ততা, ফর্ম ধরে রাখার ক্ষমতা এবং টেকসইতার কারণে বিশেষ করে ফরমাল ও টেকসই পোশাকে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। যদিও এটি Knit ফ্যাব্রিকের মতো নমনীয় নয়, তবে পোশাকের কাঠামো বজায় রাখতে এটি অধিক কার্যকর।

ওভেন ফ্যাব্রিকের প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  • শক্ত ও টেকসই:
    সুতা সোজা রেখায় থাকার কারণে ফ্যাব্রিকটি তুলনামূলক বেশি শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।

  • কম নমনীয় (Less Elasticity):
    Knit ফ্যাব্রিকের চেয়ে নমনীয়তা কম থাকে, তাই ফর্ম ধরে রাখে।

  • ফরমাল ও কাঠামোগত লুক:
    বেশি ব্যবহৃত হয় অফিসিয়াল পোশাক, জামা, প্যান্ট, স্যুট ইত্যাদিতে।

  • কম বাতাস চলাচল:
    Knit ফ্যাব্রিকের তুলনায় বাতাস কম চলাচল করে, ফলে কিছু ক্ষেত্রে কম শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য।

  • ছিঁড়ে গেলে সোজা ফাটা:
    Knit ফ্যাব্রিকের মত ঝরঝরে হয় না, বরং ফ্যাব্রিক সোজা লাইন ধরে ছিঁড়ে যায়।


1. তৈরির পদ্ধতি (Manufacturing Process)

  • নিটেড ফ্যাব্রিক:
    সুতা গুলো গুলকুলির মতো বোনা হয়, যাকে Knitting বলে। এটি মেশিন বা হাতে তৈরি হতে পারে।

  • ওভেন ফ্যাব্রিক:
    সুতা গুলো একে অপরের সাথে ৯০ ডিগ্রী কোণে ক্রস করে বোনা হয়, যাকে Weaving বলে। সাধারণত লুফ বা ঢেউ নয় বরং সরল রেখা আকৃতির।

2. গঠন ও ধরন (Structure & Type)

নিটেড ফ্যাব্রিকের ধরন:

  • Single Knit: এক পাশে মসৃণ, অন্য পাশে লুপের আকৃতি দেখা যায়।

  • Double Knit: দুই পাশে মসৃণ ও শক্ত ফ্যাব্রিক, যা একটু বেশি টেকসই।

  • Rib Knit: লম্বালম্বি রেখাযুক্ত ফ্যাব্রিক, ফিটিং পোশাকে ব্যবহৃত হয়।

  • Purl Knit: দুই পাশে লুপের আকার দেখা যায়, নরম হয়।

ওভেন ফ্যাব্রিকের ধরন (Types of Woven Fabric):

  • Plain Weave: সরল এবং সহজ প্যাটার্ন, সবথেকে প্রচলিত।

  • Twill Weave: ডায়াগোনাল রেখাযুক্ত প্যাটার্ন, যেমন ডেনিম।

  • Satin Weave: মসৃণ এবং চকচকে ফিনিশ, যেমন সাটিন কাপড়।

  • Basket Weave: দুই বা ততোধিক সুতা একসাথে বোনা হয়, যা দেখতে টেকসই ও মোটা হয়।


3. বৈশিষ্ট্য (Characteristics)
  • নিটেড ফ্যাব্রিক:

    • অনেক বেশি নমনীয় ও ইলাস্টিক।

    • ভাল এয়ার পারমিয়েবিলিটি (শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষমতা)।

    • সাধারণত ঝরঝরে বা ড্রপ আকারে ঝরে।

    • তাড়াতাড়ি ঝুলে যেতে পারে।

    • প্রায়শই টি-শার্ট, সোয়েটার, মেহেন্দি কাপড় ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

  • ওভেন ফ্যাব্রিক:

    • শক্তপোক্ত ও টেকসই।

    • কম নমনীয়, আঠালো ও ফর্ম ধরে।

    • সাধারণত সোজা রেখায় ছিঁড়ে ফেটে যায়।

    • ফরমাল শার্ট, প্যান্ট, জিন্স, স্যুট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

4. ব্যবহার (Usage)

নিটেড ফ্যাব্রিকের ব্যবহার (Usage of Knitted Fabric)

  1. টি-শার্ট ও ক্যাজুয়াল পোশাক:
    আরামদায়ক ও নমনীয় হওয়ায় টি-শার্ট, টপস, এবং হালকা জামা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

  2. স্পোর্টস ও অ্যাথলেটিক ওয়্যার:
    সাঁতারু পোশাক, যোগব্যায়াম পোশাক, ও জিম ওয়্যার হিসেবে ব্যবহৃত হয় কারণ এটি দেহের সঙ্গে মানিয়ে নেয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস যোগায়।

  3. আন্ডারগার্মেন্টস:
    অন্তর্বাস, সোয়েটার, থার্মাল পোশাক ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

  4. শীতকালীন পোশাক:
    সোয়েটার, কার্ডিগান, ও স্কার্ফ তৈরি করতে নিটেড ফ্যাব্রিক আদর্শ।

  5. ফিটিং অংশ:
    হাতা, কলার, কোমরের অংশে স্ট্রেচযোগ্য নিটেড ফ্যাব্রিক ব্যবহার হয়।

ওভেন ফ্যাব্রিকের ব্যবহার (Usage of Woven Fabric)

  1. ফরমাল পোশাক:
    অফিসিয়াল শার্ট, ব্লাউজ, প্যান্ট, স্যুট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

  2. ডেনিম ও জিন্স:
    শক্ত ও টেকসই ডেনিম কাপড় তৈরি হয় ওভেন ফ্যাব্রিক থেকে।

  3. জ্যাকেট ও কোট:
    ভারী ও কাঠামোগত পোশাক যেমন জ্যাকেট ও কোট তৈরিতে ওভেন ফ্যাব্রিক ব্যবহার হয়।

  4. হোম টেক্সটাইলস:
    বিছানার চাদর, পর্দা, টেবিল ক্লথ ইত্যাদিতেও ব্যবহৃত হয়।

  5. ফ্যাশনেবল ড্রেস ও পোশাক:
    সাটিন, তুলা, লিনেন, টুইল ধরনের কাপড় তৈরি হয় ওভেন ফ্যাব্রিক থেকে।


5. যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ (Care & Maintenance)
  • নিটেড ফ্যাব্রিক:
    হালকা ও কোমল ধোয়া উচিত, বেশি টান দিলে ফ্যাব্রিক ফেটে যেতে পারে।

  • ওভেন ফ্যাব্রিক:
    তুলনামূলক টেকসই, তবে সঠিকভাবে ধোয়া এবং স্থিরভাবে স্টোর করতে হয় যাতে সেলাই বা কাটছাঁট ঠিক থাকে।

সংক্ষেপে:

  • নিটেড ফ্যাব্রিক: আরামদায়ক, নমনীয় পোশাকে বেশি ব্যবহৃত।

  • ওভেন ফ্যাব্রিক: শক্তপোক্ত, টেকসই ও ফরমাল পোশাকে ব্যবহৃত।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন Please Share with your Friends

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url