ফেব্রিক অনুযায়ী আয়রনিং টেম্পারেচার | Fabric Iron Temperature
ফেব্রিক অনুযায়ী আয়রনিং টেম্পারেচার | Fabric Iron Temperature
কাপড় আমাদের সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন মানুষের রুচি কেমন তা সহজেই অনুমান করা যায় তার পোশাক দেখে। কিন্তু শুধু ভালো কাপড় পরলেই হবে না—তা সঠিকভাবে পরিচর্যা করাও জরুরি। আর সঠিক আয়রন বা ইস্ত্রি ছাড়া একটি সুন্দর জামাও অগোছালো দেখাতে পারে।
তবে অনেকে ইস্ত্রি করতে ভয় পান, বিশেষ করে পোশাক পুড়ে যাওয়ার ভয়ে। সবসময় লন্ড্রিতে না পাঠিয়ে যদি ঘরে বসে নিজেই কাপড় ইস্ত্রি করতে চান, তাহলে দরকার সঠিক তাপমাত্রা জানার।
বিভিন্ন ধরণের ফেব্রিকের জন্য আয়রনিংয়ের তাপমাত্রা আলাদা হয়, কারণ প্রতিটি ফেব্রিকের তাপ সহনশীলতা ভিন্ন। নিচে সাধারণ কিছু ফেব্রিক অনুযায়ী আদর্শ আয়রনিং টেম্পারেচার দেওয়া হলো:
ফেব্রিক টাইপ | আদর্শ আয়রনিং টেম্পারেচার (°C) | আয়রন সেটিংস/লেভেল | মন্তব্য |
---|---|---|---|
Cotton (কটন) | 200°C – 220°C | High (৩ পয়েন্ট) | ভিজা করে বা ভাপ দিয়ে আয়রন করলে ভালো হয় |
Linen (লিনেন) | 215°C – 240°C | High (৩ পয়েন্ট) | কটনের মতোই ভিজিয়ে আয়রন করা ভালো |
Silk (সিল্ক) | 130°C – 150°C | Low (১ পয়েন্ট) | পিছনের দিকে আয়রন করা উত্তম |
Polyester (পলিয়েস্টার) | 135°C – 150°C | Low to Medium (১-২ পয়েন্ট) | কাপড়ের ওপর এক টুকরো কাপড় দিয়ে আয়রন করুন |
Wool (উল) | 140°C – 160°C | Medium (২ পয়েন্ট) | আয়রন করার সময় স্টিম ব্যবহার করা ভালো |
Nylon (নাইলন) | 110°C – 130°C | Low (১ পয়েন্ট) | অতিরিক্ত গরমে গলে যেতে পারে, সতর্ক থাকুন |
Acrylic (অ্যাক্রিলিক) | 110°C – 120°C | Low (১ পয়েন্ট) | হালকা আয়রন, অন্য কাপড়ের নিচে রেখে আয়রন করা |
Rayon (রেয়ন/ভিসকস) | 120°C – 140°C | Low (১ পয়েন্ট) | ভিতর থেকে আয়রন করা ভালো |
Denim (ডেনিম) | 200°C – 220°C | High (৩ পয়েন্ট) | মজবুত কাপড়, বেশি তাপ সহ্য করতে পারে |
ইস্ত্রি করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
সবসময় পোশাকের label বা care tag দেখে নিন। সেনসিটিভ কাপড় যেমন সিল্ক, নাইলন বা অ্যাক্রিলিক-এর উপর হালকা পাতলা কাপড় রেখে ইস্ত্রি করুন। ইস্ত্রি করার আগে গরম হয়ে নিতে দিন। ব্যবহার শেষে সুইচ বন্ধ করে দিন এবং ঠাণ্ডা হবার সময় সাবধানে রাখুন।
সিল্ক: কোমলতায় মোড়া রাজকীয় কাপড়
সিল্কের জামাকাপড় মানেই রাজকীয় সৌন্দর্য, হালকা গ্লস এবং নরম স্পর্শ। এটি দেখতে যেমন জমকালো, তেমনি এর যত্নও অত্যন্ত সংবেদনশীল। সিল্কের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এটি খুব সূক্ষ্ম এবং কোমল। তাই সামান্য বেখেয়ালেও পোশাকের সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে পারে।
ইস্ত্রির সময় সিল্কের যত্নে বিশেষ সতর্কতা নিতে হয়:
সিল্ক কাপড় সর্বোচ্চ ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ১৪৮.৮৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় ইস্ত্রি করা নিরাপদ।তাপমাত্রা বেশি হলে কাপড় পুড়ে যেতে পারে বা রঙ ম্লান হয়ে যেতে পারে।ইস্ত্রির সময় সিল্ক কাপড়টি উল্টো করে দিন, অর্থাৎ ভিতরের দিক থেকে ইস্ত্রি করুন।সম্ভব হলে, ইস্ত্রির নিচে একটি পাতলা সুতির কাপড় রেখে ইস্ত্রি করুন। স্টিম ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ অতিরিক্ত আর্দ্রতা সিল্কের তন্তুকে ক্ষতি করতে পারে।
টিপস স্মরণে রাখুন:
সিল্কের কাপড় কখনোই সরাসরি উচ্চ তাপে ইস্ত্রি করবেন না। কাপড় শুকনো অবস্থায় হালকা ইস্ত্রি করুন।সিল্কের জামা ইস্ত্রি করার আগে ইস্ত্রিটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার এবং নিচের অংশ মসৃণ কিনা দেখে নিন।
লিনেন কাপড়: স্বস্তি ও স্টাইলের নিখুঁত সংমিশ্রণ
লিনেন (Linen) হচ্ছে এমন এক কাপড়, যা গরম আবহাওয়ার জন্য একদম আদর্শ। এটি যেমন হালকা ও আরামদায়ক, তেমনই স্টাইলিশও। তবে লিনেনের একটি সমস্যাও রয়েছে—এটি খুব দ্রুত কুঁচকে যায়। আর কুঁচকে যাওয়া লিনেন জামা পরে বাইরে বের হলে তা আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।
তাই লিনেন পরার আগে ভালোভাবে ইস্ত্রি করে নেওয়া জরুরি।
লিনেন ইস্ত্রির সঠিক তাপমাত্রা:
লিনেন কাপড় ইস্ত্রি করতে হবে ৪৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় (প্রায় ২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।এটি তুলনামূলকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা, কারণ লিনেন মজবুত কাপড় এবং বেশি তাপ সহ্য করতে পারে।ইস্ত্রি করার সময় স্টিম ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়, কারণ স্টিম কাপড়ের ভাঁজগুলো দ্রুত সোজা করে।
ইস্ত্রির সময় কিছু পরামর্শ:
লিনেন কাপড় হালকা ভেজা অবস্থায় ইস্ত্রি করলে কুঁচকানো সহজে সোজা হয়।কাপড়ের উল্টো দিক থেকে ইস্ত্রি করাই নিরাপদ।অতিরিক্ত গরম ইস্ত্রি সরাসরি কাপড়ে না দিয়ে, মাঝে একটি পাতলা কাপড় বা প্রেস ক্লথ ব্যবহার করতে পারেন।ইস্ত্রি করার পর জামা ঝুলিয়ে রাখুন, যাতে আবার কুঁচকে না যায়।\
সিফন ও লাইক্রা: স্পর্শে হালকা, যত্নে সংবেদনশীল
সিফন ও জর্জেট কাপড় সাধারণত শাড়ি, ওড়না, গাউন, এমনকি কামিজ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। এই কাপড় এতটাই হালকা, পাতলা এবং মিহি যে অনেক সময় ইস্ত্রি করতেই হয় না। তবে কখনো যদি ভাঁজ পড়ে যায় বা প্রয়োজন হয়, তখন খুবই নরম ও সতর্কভাবে ইস্ত্রি করতে হবে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা: ২৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ১৩৫°C)।
বিশেষ পরামর্শ: সম্ভব হলে ইস্ত্রি না করাই ভালো । ইস্ত্রি করতে হলে উল্টো দিক থেকে এবং হালকা চাপ দিয়ে করুন। পাতলা সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে ইস্ত্রি করাটা সবচেয়ে নিরাপদ।
লাইক্রা ব্লেন্ড ফেব্রিক: নমনীয়তায় আরাম, তাপমাত্রায় ঝুঁকি
লাইক্রা বা স্প্যানডেক্স যুক্ত ফেব্রিক সাধারণত নরম, টানটান এবং লچকযুক্ত হয়ে থাকে। এটি ফিটিংস পোশাকে ব্যবহার হয় যেমন: লেগিংস, ফিট কামিজ, স্পোর্টসওয়্যার ইত্যাদিতে।
এই কাপড়ের তন্তু গরমে খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই ইস্ত্রি সাধারণত নিরুৎসাহিত করা হয়।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা: ২৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ১৩৫°C)
বিশেষ পরামর্শ:
ইস্ত্রি না করাই উত্তম। জরুরি হলে একটি পাতলা কাপড়ের নিচ দিয়ে উল্টো করে হালকা তাপে ইস্ত্রি করুন। কখনোই সরাসরি ইস্ত্রির হিট প্লেট কাপড়ে লাগাবেন না।
সিফন, জর্জেট এবং লাইক্রা—এই তিনটি ফেব্রিক দেখতে যতটা সুন্দর ও আরামদায়ক, ঠিক ততটাই সংবেদনশীল। তাই এসব কাপড় ইস্ত্রি করতে হলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ভুল তাপমাত্রা পুরো পোশাক নষ্ট করে দিতে পারে।
কটন ফেব্রিক ইস্ত্রির সঠিক তাপমাত্রা
সুন্দর ও পরিপাটি লুক পেতে সুতির জামাকাপড় ইস্ত্রি করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ যত দামী বা স্টাইলিশ হোক না কেন, কুঁচকে থাকা সুতির কাপড় আপনার ইমেজ নষ্ট করতে পারে।
তাপমাত্রা সেটিংস:
সুতির কাপড় ইস্ত্রির জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ৪০০°F (প্রায় ২০৪°C)।
ইস্ত্রির টিপস:
কাপড়কে সমানভাবে বিছিয়ে নিন। ইস্ত্রির সময় হালকা পানি ছিটাতে পারেন বা steam function ব্যবহার করুন – এতে কুঁচকানো ভাব দ্রুত সোজা হবে। খুব পাতলা সুতির কাপড় হলে হিট একটু কম দিন। সঠিক তাপমাত্রায় ইস্ত্রি করলে জামা থাকবে নিখুঁত, আর আপনি দেখাবেন একদম গুছানো ও স্মার্ট।
পলিয়েস্টার কাপড় ইস্ত্রির সঠিক নিয়ম
পলিয়েস্টার কাপড় দেখতে ঝকঝকে হলেও ইস্ত্রির সময় একটু অসতর্ক হলেই কাপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটি একটি সিনথেটিক ফেব্রিক, তাই অতিরিক্ত তাপে সহজেই গলে বা পুড়ে যেতে পারে।
আদর্শ তাপমাত্রা:
৩০০°F (প্রায় ১৪৮°C) এর নিচে রাখুন ইস্ত্রির তাপমাত্রা। এর চেয়ে বেশি হলেই কাপড়ে দাগ পড়তে পারে বা কাপড় গলে যেতে পারে।
Low heat বা Synthetic setting ব্যবহার করুন। ইস্ত্রির নিচে একটি পাতলা কাপড় রাখলে সরাসরি তাপ এড়ানো যায়। Steam ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এটি দাগ ফেলতে পারে।
⚠️ সতর্ক না হলে প্রিয় পোশাক একবারেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই তাপমাত্রা ঠিকঠাক বুঝে তবেই ইস্ত্রি করুন।