Wash কত প্রকার ও কি কি?

Wash কত প্রকার ও কি কি
ওয়াশের বিভিন্ন ধরন ও তাদের ব্যবহার: মেকানিক্যাল থেকে কেমিক্যাল—ফ্যাশনে লুক, সফটনেস ও টেক্সচার উন্নত করার উপায়।

পোশাক বা টেক্সটাইল শিল্পে "Wash" বলতে মূলত কাপড় বা পোশাকের উপরে বিভিন্ন ধরণের ফিনিশিং প্রক্রিয়া বোঝায়, যা কাপড়কে নরম করা, রঙ স্থায়ী করা, লুক পরিবর্তন করা অথবা বিশেষ এফেক্ট তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়।

Wash প্রধানত দুই প্রকার:

১. মেকানিক্যাল ওয়াশ (Mechanical Wash)

মেকানিক্যাল ওয়াশ (Mechanical Wash) বলতে এমন সকল ওয়াশ বা ফিনিশিং প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে কাপড় বা পোশাকের লুক, ফিল, কিংবা টেক্সচার পরিবর্তনের জন্য প্রধানত মেশিন, ঘর্ষণ, চাপ, তাপ বা শারীরিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ওয়াশে রাসায়নিকের ব্যবহার কম অথবা একদমই থাকে না। যেখানে রাসায়নিকের ব্যবহার কম, মূলত মেশিন, ঘর্ষণ বা তাপের মাধ্যমে কাজ করা হয়। যেমন:

  • Stone Wash

  • Enzyme Wash

  • Sand Blasting

  • Whiskering

  • Grinding

  • Scraping

২. কেমিক্যাল বা ওয়েট প্রসেস ওয়াশ (Chemical or Wet Process Wash)

কেমিক্যাল বা ওয়েট প্রসেস ওয়াশ (Chemical or Wet Process Wash) বলতে এমনসব ওয়াশিং প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে পানি (Wet Process) এবং বিভিন্ন রাসায়নিক (Chemical) ব্যবহারের মাধ্যমে গার্মেন্টস বা কাপড়ের রঙ, লুক, ফিল, বা প্রোপার্টিজ পরিবর্তন করা হয়। এখানে রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে ফিনিশিং বা রঙ, লুক পরিবর্তন করা হয়। যেমন:

  • Bleach Wash

  • Acid Wash

  • Caustic Wash

  • Softener Wash

  • Pigment Wash

  • Bio Wash

  • Reactive Wash

  • Silicon Wash

কেমিক্যাল ওয়াশের গুরুত্ব:

কেমিক্যাল ওয়াশ হলো পোশাক বা টেক্সটাইল পণ্যকে বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধৌত করে নির্দিষ্ট চেহারা, ফিনিশ, এবং গুণাগুণ প্রদান করার একটি পদ্ধতি। এর গুরুত্ব নিচে তুলে ধরা হলো:

১. ফ্যাশনেবল লুক তৈরি করা

কেমিক্যাল ওয়াশের মাধ্যমে পোশাকে ইউনিক বা ভিনটেজ লুক তৈরি করা যায়, যেমন ফেডেড ইফেক্ট, ডিসট্রেসড লুক, বা সফট কালার টোন। এটি ফ্যাশন ট্রেন্ডে ভিন্নতা নিয়ে আসে।

২. সফটনেস বৃদ্ধি

কিছু ওয়াশ রাসায়নিক ফাইবারের উপর কাজ করে পোশাককে আরো নরম এবং আরামদায়ক করে তোলে, যেমন এনজাইম ওয়াশ।

৩. রঙ এবং টেক্সচারের উন্নতি

কেমিক্যাল প্রসেসের মাধ্যমে কাপড়ে বিভিন্ন ধরনের শেডিং, টোনিং, ও টেক্সচারাল ইফেক্ট তৈরি করা যায়, যা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

৪. শ্রিঙ্কেজ বা সাইজ কন্ট্রোল

ওয়াশিং প্রক্রিয়ার সময় কাপড়ের সঙ্কোচন বা প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যার ফলে পোশাকের ফিট আরও নিখুঁত হয়।

৫. সস্টেইনেবিলিটি বৃদ্ধিতে ভূমিকা

আধুনিক কেমিক্যাল ওয়াশ প্রক্রিয়াগুলোতে পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক ও কম পানি ব্যবহার হচ্ছে, যা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির টেকসই উৎপাদনকে উৎসাহিত করে।

৬. গার্মেন্টের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি

সঠিক কেমিক্যাল ওয়াশের মাধ্যমে পোশাকের ময়লা, স্টার্চ, বা প্রোডাকশন স্টেইন রিমুভ হয় এবং গার্মেন্ট আরও ব্যবহার উপযোগী হয়।

যেসব কেমিক্যাল ওয়াশ সাধারণত ব্যবহৃত হয় তাদের উদাহরণ: এনজাইম ওয়াশ, স্টোন ওয়াশ, ব্লিচ ওয়াশ, এসিড ওয়াশ, সিলিকন ওয়াশ ইত্যাদি।

ব্লিচ কত প্রকার ও কি কি? 

ব্লিচ (Bleach) হলো এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা কাপড় বা অন্যান্য পৃষ্ঠের রঙ ও দাগ মুছে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষভাবে কাপড়ের রঙ ফ্যাকাসে করার বা সাদা কাপড় তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ব্লিচের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে এবং এদের ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। নিচে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

ব্লিচের প্রধান প্রকারসমূহ:

  1. অক্সিজেন ব্লিচ (Oxygen Bleach / Non-Chlorine Bleach)

    • উপাদান: সাধারণত সোডিয়াম পেরকার্বনেট বা সোডিয়াম পারবোরেট।

    • বৈশিষ্ট্য: তুলনামূলকভাবে কোমল, কাপড়ে কম ক্ষয় করে।

    • ব্যবহার: রঙিন কাপড়, সাদা কাপড়, এবং সাধারণ দাগ দূর করার জন্য।

    • সতর্কতা: গরম পানিতে ভালো কাজ করে, কিন্তু খুব শক্তিশালী নয়।

  2. ক্লোরিন ব্লিচ (Chlorine Bleach / Sodium Hypochlorite)

    • উপাদান: সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট (NaClO)।

    • বৈশিষ্ট্য: শক্তিশালী ব্লিচিং এজেন্ট, দ্রুত কাজ করে।

    • ব্যবহার: মূলত সাদা কাপড়ের জন্য, শক্ত দাগ বা জীবাণুমুক্তকরণের জন্য।

    • সতর্কতা: রঙিন কাপড়ে ব্যবহার করা উচিত নয়; অতিরিক্ত ব্যবহার কাপড় ক্ষয় করতে পারে।

  3. অ্যাসিড ব্লিচ (Acid Bleach)

    • উপাদান: সাধারণত হাইড্রোক্লোরিক এসিড বা সালফিউরিক এসিডের সংমিশ্রণ।

    • বৈশিষ্ট্য: কাপড়ে থাকা খনিজ পদার্থ বা লোহা দাগ দূর করতে ব্যবহৃত হয়।

    • ব্যবহার: বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন কাগজ বা ফ্যাব্রিক প্রক্রিয়ায়।

    • সতর্কতা: অত্যন্ত সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে; সরাসরি ত্বকে লাগলে ক্ষতি করতে পারে।

  4. সেলুলোজ ব্লিচ (Enzymatic / Oxygen-based for Fibers)

    • উপাদান: অক্সিজেন বা এনজাইম সংমিশ্রিত ব্লিচ।

    • বৈশিষ্ট্য: তুলনামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব এবং ফ্যাব্রিকের জন্য নিরাপদ।

    • ব্যবহার: সংবেদনশীল কাপড়, যেমন উল, সিল্ক বা সূক্ষ্ম কাপড়।

ব্লিচ ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য:

ব্লিচ হলো এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা কাপড় বা অন্যান্য পৃষ্ঠ থেকে দাগ, রঙ বা অম্লানতা দূর করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে সাদা কাপড় তৈরি, রঙ ফ্যাকাসে করা, দাগ মুছা এবং জীবাণুমুক্তকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্লিচ ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো কাপড়কে পরিষ্কার, উজ্জ্বল এবং নিরাপদ রাখা।

বিভিন্ন প্রকারের ব্লিচের ব্যবহার এবং উদ্দেশ্য ভিন্ন:

  • অক্সিজেন ব্লিচ (Oxygen / Non-Chlorine Bleach): তুলনামূলকভাবে কোমল, রঙিন কাপড় ও সাদা কাপড়ের দাগ দূর করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • ক্লোরিন ব্লিচ (Chlorine Bleach): শক্তিশালী ব্লিচিং এজেন্ট, সাদা কাপড়ে দাগ ও জীবাণু দূর করার জন্য। রঙিন কাপড়ে ব্যবহার করা উচিত নয়।

  • অ্যাসিড ব্লিচ (Acid Bleach): কাপড়ে থাকা লোহা বা খনিজ দাগ দূর করতে ব্যবহৃত হয়। খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হয়।

  • সেলুলোজ / এনজাইম্যাটিক ব্লিচ: সংবেদনশীল কাপড় যেমন উল, সিল্ক বা সূক্ষ্ম কাপড়ের জন্য নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ব্লিচ।

ব্লিচ ব্যবহারের লক্ষ্য:

  1. কাপড় সাদা ও উজ্জ্বল করা।

  2. দাগ এবং জীবাণু দূর করা।

  3. পরবর্তী রঙ বা প্রিন্ট প্রক্রিয়ার জন্য কাপড় প্রস্তুত করা।

  4. কাপড়ের স্থায়িত্ব ও মান বজায় রাখা।

সঠিক প্রকারের ব্লিচ এবং সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে কাপড়কে দীর্ঘস্থায়ী, পরিষ্কার এবং নিরাপদ রাখা সম্ভব। অতিরিক্ত বা ভুল ব্যবহারে কাপড় ক্ষয় বা ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে, তাই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন Please Share with your Friends

Next Post Previous Post