টেক্সটাইল এর পোশাকের ইতিহাস, History of Textiles and Clothing!
টেক্সটাইল এর পোশাকের ইতিহাস, History of Textiles and Clothing!
![]() |
টেক্সটাইল ও পোশাকের ইতিহাস – সভ্যতার সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক! |
টেক্সটাইল বা পোশাকের ইতিহাস সুদূর অতীতে প্রোথিত, যা মানব সভ্যতার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। প্রায় ৭০০০ বছর আগে, মানুষ প্রথম প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহার করে কাপড় তৈরি করা শুরু করে। তুলা, লিনেন, পশম ও রেশম ছিল প্রাচীনতম উপকরণ, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষের পোশাক তৈরির যাত্রা শুরু হয়।
প্রাচীন যুগে টেক্সটাইল ও পোশাকের শুরু:
-
প্রাচীনকালে মানুষ বন্য প্রাণীর চামড়া, পাতা কিংবা বৃক্ষের ছাল দিয়ে শরীর ঢাকত।
-
পরে মানুষ তন্তু (fibers) আবিষ্কার করে এবং তা দিয়ে সূতা (yarn) তৈরি করতে শেখে।
-
এই সুতা দিয়ে কাপড় বোনা শুরু হয়, যা ছিল টেক্সটাইল শিল্পের গোড়ার কথা।
মধ্যযুগ (Medieval Period):
এই সময় বিভিন্ন সংস্কৃতি ও অঞ্চলের মধ্যে টেক্সটাইল কৌশল বিকশিত হয়।
-
হস্তচালিত তাঁত (Handlooms) এবং রঙিন ডিজাইনের কাপড় তৈরি জনপ্রিয়তা পায়।
-
অঞ্চলের জলবায়ু ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পোশাকের জন্ম হয়।
মিসর, ভারত, চীন – প্রাচীন টেক্সটাইল সভ্যতা:
-
মিসর (Egypt): প্রায় ৫,০০০ বছর আগে মিসরীয়রা লিনেন কাপড় তৈরি করত।
-
চীন (China): সিল্ক বা রেশম কাপড়ের আবিষ্কার হয় খ্রিস্টপূর্ব ২৬৪০ সালে।
-
ভারত (India): সিন্ধু সভ্যতায় (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল) তুলা (Cotton) থেকে বস্ত্র তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। ভারত ছিল প্রাচীন বিশ্বের এক বড় কাপড় রপ্তানিকারক দেশ।
টেক্সটাইল প্রযুক্তির অগ্রগতি:
-
প্রথমে হাতে তৈরি হতো কাপড়, যেমন: হাত চাকা (spinning wheel) ও তাঁত (handloom) ব্যবহৃত হতো।
-
১৮শ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লব (Industrial Revolution) ঘটে এবং যন্ত্রচালিত তাঁত (power loom) এবং স্পিনিং জেনি আবিষ্কারের মাধ্যমে টেক্সটাইল উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।
-
এতে তৈরি হয় আজকের আধুনিক টেক্সটাইল শিল্পের ভিত্তি।
আধুনিক যুগ (Modern Era):
-
যন্ত্রচালিত তাঁত (Power Loom), স্পিনিং জেনি, স্টিম ইঞ্জিন ইত্যাদি প্রযুক্তি ফ্যাব্রিক উৎপাদনকে দ্রুত ও ব্যাপক করে তোলে।
-
কৃত্রিম তন্তু (Synthetic Fibers) যেমন: পলিয়েস্টার, নাইলন, অ্যাক্রিলিক—বস্ত্র জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
আধুনিক টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প:
বর্তমানে টেক্সটাইল শুধুমাত্র তুলা, রেশম বা উলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
-
পলিয়েস্টার, নাইলন, স্প্যানডেক্স, অ্যাক্রিলিক ইত্যাদি কৃত্রিম তন্তুও টেক্সটাইলের বড় অংশ দখল করেছে।
-
বিশ্বজুড়ে টেক্সটাইল শিল্প বিলিয়ন ডলারের একটি ইন্ডাস্ট্রি, যা পোশাক, হোম ফার্নিশিং, কার্পেট, মেডিকেল ফ্যাব্রিক, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল ইত্যাদিতে ব্যবহার হয়।
বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক ইতিহাস:
-
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় বিশ্বের দরবারে একসময় বিখ্যাত ছিল।
-
১৯৮০’র দশকের পর থেকে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়।
-
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, বিশেষ করে নীট ও ওভেন পোশাকে।
টেক্সটাইল ও পোশাকের ইতিহাস শুধু বস্ত্র পরার ইতিহাস নয়, বরং এটি মানব সভ্যতার রুচি, প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির বিকাশের প্রতিফলন।