ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাউজকিপিং নীতিমালা (Housekeeping Policy)
ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাউজকিপিং নীতিমালা (Housekeeping Policy)
"Housekeeping" শব্দটির অর্থ হলো বাড়ি-ঘর পরিচ্ছন্নভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা এবং তার সঠিক তত্ত্বাবধান করা। একটি বাড়িতে সাধারণত কম সংখ্যক মানুষ বসবাস করে, ফলে বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা তুলনামূলকভাবে সহজ।
কিন্তু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মতো একটি উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজার হাজার কর্মী একত্রে কাজ করেন এবং নিয়মিত চলাফেরা করেন। এ ধরনের কর্মব্যস্ত পরিবেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে কারখানার ভেতর সবসময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সরঞ্জামাদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা এবং চলাচলের পথ মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি মেনে চলা প্রয়োজন, যা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাউজকিপিং নীতিমালা দ্বারা নির্ধারিত।
এ কাজটি শুধু প্রশাসনের একার দায়িত্ব নয়; বরং প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে, যেন আমাদের ফ্যাক্টরি পরিষ্কার, নিরাপদ ও কার্যোপযোগী থাকে সবসময়।
১। নীতির উদ্দেশ্য
কর্মক্ষেত্রকে সবসময় পরিপাটি, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখা। দুর্ঘটনা, আগুন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধ করা। কর্মীদের স্বাস্থ্য ও মনোভাব উন্নত করা। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।
২। নীতির আওতা
এই নীতিমালা কারখানা/শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগে, যেমন – উৎপাদন, গুদাম, অফিস, ক্যান্টিন, ওয়াশরুম, মেশিন এরিয়া ইত্যাদিতে প্রযোজ্য।
৩। মূলনীতি সমূহ
৩.১। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
সকল কর্মক্ষেত্র প্রতিদিন ঝাড়ু ও মোছার মাধ্যমে পরিষ্কার করতে হবে। তেল, গ্রীস বা পানির দাগ সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলতে হবে।
৩.২। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:
নির্ধারিত জায়গায় বর্জ্য ফেলতে হবে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য আলাদা রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩.৩। যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবস্থাপনা:
ব্যবহারের পর সকল যন্ত্রপাতি নির্ধারিত স্থানে রাখতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ সরঞ্জাম চিহ্নিত করে মেরামতের জন্য পাঠাতে হবে।
৩.৪। চলাচলের পথ পরিষ্কার রাখা:
করিডোর, সিঁড়ি ও জরুরি বের হওয়ার পথ সবসময় খালি রাখতে হবে। "Do Not Block" সাইনবোর্ড দৃশ্যমান স্থানে রাখতে হবে।
৩.৫। কর্মীদের প্রশিক্ষণ:
হাউজকিপিংয়ের গুরুত্ব বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান। নতুন কর্মীদের ইন্ডাকশন ট্রেনিং-এ হাউজকিপিং বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।
৪। দায়িত্ব ও কর্তব্য
ভূমিকা | দায়িত্ব |
---|---|
ব্যবস্থাপক | নীতিমালা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব প্রদান |
সুপারভাইজার | নিয়মিত মনিটরিং ও ফিডব্যাক প্রদান |
কর্মী | নীতিমালা অনুসরণ এবং সচেতনতা বজায় রাখা |
৫। পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন
প্রতিমাসে অন্তত ১ বার হাউজকিপিং অডিট হবে। ফলাফল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬। দণ্ড ও পুরস্কার
নিয়মিত হাউজকিপিং মেনে চললে প্রশংসা ও পুরস্কার। অবহেলা করলে মৌখিক সতর্কতা, লিখিত সতর্কতা এবং প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
ভূমিকা (Introduction)
এই হাউজকিপিং নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো—পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও গুছানো পরিবেশ বজায় রাখতে একটি নির্দিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা, যাতে প্রতিবার আলাদাভাবে নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন না পড়ে। এই নীতিমালা অনুসরণ করে প্রতিটি বিভাগ ও কর্মী তাদের নিজ নিজ জায়গা পরিষ্কার ও কার্যোপযোগী রাখতে সচেষ্ট থাকবে।
পরিধি (Scope):
একটি ফ্যাক্টরির পরিচ্ছন্নতা, সাজানো-গোছানো পরিবেশ এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। ফ্যাক্টরিতে যদি মালামাল, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য আসবাবপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তাহলে স্থান সংকুলান কঠিন হয়ে পড়ে। এতে জিনিসপত্র গাদাগাদি হয়ে থাকার ফলে কাজের পরিবেশ ব্যাহত হয়, উৎপাদনশীলতা কমে যায় এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এই কারণেই হাউজকিপিং কার্যক্রমকে নিয়মিত, সুশৃঙ্খল এবং সকলের অংশগ্রহণে পরিচালিত করতে একটি সুদৃঢ় নীতিমালার প্রয়োজন। এই নীতিমালার আওতায় নিচের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিশেষ যত্ন ও তদারকি নিশ্চিত করতে হবে:
হাউজকিপিংয়ের আওতাভুক্ত প্রধান এলাকাসমূহ:
-
গেইট এলাকা
-
ফ্যাক্টরির আঙিনা
-
স্টোর / গুদাম
-
মেশিন এরিয়া
-
ফিনিশিং সেকশন
-
কাপড়ের রোল রাখার স্থান
-
সিঁড়ি ও করিডোর
-
বিভিন্ন অফিস কক্ষ
-
শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র (Daycare)
-
মেডিকেল রুম
-
টয়লেট ও ওয়াশরুম
-
খাবার কক্ষ / ক্যান্টিন
গেইট এলাকাঃ\
ফ্যাক্টরি চলাকালীন সময় সকল গেইট খোলা রাখতে হবে যেন কর্মীদের চলাচলে কোনো প্রকার বাধা না হয়। গেইটের ভিতরে বা বাইরে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধক, অপ্রয়োজনীয় মালামাল বা বাধা রাখা যাবে না। কোনো যানবাহন গেইট এলাকায় দাঁড় করানো নিষিদ্ধ; শুধুমাত্র অনুমোদিত সময় ও স্থানে পার্কিং অনুমোদিত হবে। গেইটে কোনো কর্মী বা বাইরের লোক সমাবেশ, জটলা বা অপ্রয়োজনীয় আড্ডা দেওয়া যাবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেইটে নির্দিষ্ট নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্বে থাকবে এবং তারা চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
ফ্যাক্টরির আঙিনা (Factory Premises):
ফ্যাক্টরির আঙিনা সবসময় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুলের টব বা গাছপালা এমনভাবে রাখতে হবে যাতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে। টবগুলো নিয়মিত পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে হবে, গাছপালা সতেজ রাখতে হবে। ফ্যাক্টরির ভেতরে গাড়ি শুধুমাত্র নির্ধারিত পার্কিং এলাকায় রাখা যাবে। সকল গাড়ি বাইরের দিকে মুখ করে পার্ক করতে হবে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত বের করে নেওয়া যায়। গাড়ির চাবি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, নির্ধারিত চাবির বাক্সে সংরক্ষণ করতে হবে।
কোনো অবস্থাতেই ড্রাইভারের পকেটে চাবি রাখা যাবে না। মালামাল লোডিং ও আনলোডিং এর স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। কার্টুন, রশি, আবর্জনা বা কোনো ফেলে যাওয়া বর্জ্য দ্রব্য সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করতে হবে। জমতে দেওয়া যাবে না, কারণ এটি দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। আঙিনায় কোনো অপ্রয়োজনীয় বস্তু সংরক্ষণ করা যাবে না এবং চলাচলের পথ খালি রাখতে হবে।
স্টোর (Store Area):
স্টোর এলাকা সবসময় পরিচ্ছন্ন, শুষ্ক ও সুশৃঙ্খল রাখতে হবে। মালামাল শেলফ, র্যাক বা প্যালেটের উপর সুশৃঙ্খলভাবে রাখতে হবে। মেঝেতে সরাসরি কোনো সামগ্রী ফেলা যাবে না। অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী স্টোরে জড়ো করে রাখা যাবে না। সময়মতো ডিসপোজাল করতে হবে। প্রতিটি মালামালের লেবেলিং থাকতে হবে যেন সহজে সনাক্ত করা যায়। রাস্তার পথ ও ফায়ার এক্সিট বরাবর কোনো মালামাল রাখা যাবে না। ভারী বা বিপজ্জনক পণ্যগুলো নিরাপদভাবে আলাদা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। স্টোরের দরজা, জানালা এবং আলো বাতি ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আগুন বা বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যেকোনো ঝুঁকি প্রতিরোধে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর অবস্থায় রাখতে হবে।
কাপড়ের রোল রাখার স্থান (Fabric Roll Storage Area):
কাপড়ের রোল সুনির্দিষ্ট ও নিরাপদভাবে শেলফ বা প্যালেটের উপর সংরক্ষণ করতে হবে। মেঝেতে কাপড়ের রোল সরাসরি রাখা যাবে না — রোলের নিচে প্লাস্টিক বা কাঠের পাটাতন ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি রোলের উপর পরিচিতিমূলক ট্যাগ (Label) থাকতে হবে, যাতে রঙ, ধরণ, ব্যাচ নম্বর ইত্যাদি সহজে চিহ্নিত করা যায়। একই ধরনের রোল একত্রে এবং সঠিকভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে, যেন প্রয়োজন হলে দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়।
রোল রাখার এলাকা পরিষ্কার ও ধূলিমুক্ত রাখতে হবে। কাপড় ধুলো বা ময়লা থেকে রক্ষা করার জন্য কভার ব্যবহার করা যেতে পারে। অতিরিক্ত বা অব্যবহৃত রোল লুকিয়ে বা এলোমেলোভাবে রাখা যাবে না — নির্ধারিত স্থানে সঠিকভাবে রাখতে হবে। চলাচলের পথ, বিশেষ করে ফায়ার এক্সিট, সিঁড়ি, বা ওয়ার্কিং এরিয়া যেন রোলের কারণে আটকে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। রোল তোলার বা নামানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যেন দুর্ঘটনা বা কাপড় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
মেশিন এরিয়া (Machine Area):
মেশিন এরিয়া সবসময় পরিষ্কার ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হবে। প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে এবং কাজ শেষে মেশিনের চারপাশ পরিষ্কার করতে হবে। তেল, গ্রীস বা সেলাইয়ের সুতা পড়ে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করতে হবে, কারণ এটি পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ইলেকট্রিক তার, সুইচ, বোর্ড যেন খোলা অবস্থায় না থাকে — নিয়মিত চেক করতে হবে।
প্রতিটি মেশিনের পাশে ফার্স্ট এইড বক্স ও ফায়ার সেফটি ইকুইপমেন্ট থাকলে ভালো। মেশিন অপারেটর ছাড়া অন্য কেউ যেন মেশিন পরিচালনা না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো মেশিন ত্রুটিপূর্ণ হলে সাথে সাথে ট্যাগিং করে রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগে জানাতে হবে। চলাচলের পথ (walkway) সবসময় খালি রাখতে হবে। মেশিন ও দেয়ালের মাঝে অন্তত ৩ ফুট ফাঁকা রাখার চেষ্টা করতে হবে। মেশিনের নিচে কাপড়, বোতাম বা সূচ জমে থাকলে তা দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
ফিনিশিং সেকশন (Finishing Section):
ফিনিশিং সেকশন সর্বদা পরিষ্কার ও অগোছালো মুক্ত রাখতে হবে, যেন কাপড় বা পোশাক নোংরা না হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ইস্ত্রি টেবিল, ফোল্ডিং টেবিল, প্যাকিং এরিয়া প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে এবং পরে পরিষ্কার করতে হবে। আবর্জনা, কাগজ, পলিথিন, সুতা বা অন্যান্য অনাবশ্যক উপকরণ মেঝেতে ফেলা যাবে না — নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। গার্মেন্টস বা কার্টুন ফ্লোরে রাখলে তা যেন নিয়মমাফিক গুছিয়ে রাখা হয় এবং যেন চলাচলে বাধা না হয়।
প্যাকিং ম্যাটেরিয়াল (poly, carton, tag ইত্যাদি) ঠিকঠাক র্যাক বা জায়গায় রাখতে হবে। ফায়ার এক্সিট, ওয়াকওয়ে, ওয়ার্কিং স্পেস খালি রাখতে হবে। কোনো কাঁচামাল বা রেডি গার্মেন্টস যেন সেখানে না পড়ে থাকে। বাতিল কাপড় বা রিজেক্ট আইটেম আলাদা নির্ধারিত স্থানে রাখতে হবে, যেন মূল গার্মেন্টসের সঙ্গে মিশে না যায়। প্রতিটি ফিনিশিং টিমের সদস্যকে নিজ নিজ কাজের জায়গা পরিষ্কার রাখার জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে।
শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র (Child Care Centre):
শিশুপার্ক বা পরিচর্যা কেন্দ্রটিকে শিশুদের বসবাসের উপযোগী, আরামদায়ক এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুদের বসার, খেলার, ঘুমানোর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় চলাফেরার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন্দ্রের ভেতরে কোনো কাঁচের বোতল, ধারালো বা বিপজ্জনক আসবাবপত্র রাখা যাবে না, যা শিশুদের আঘাত করতে পারে। শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সুন্দর খেলনা রাখতে হবে, তবে এমন কোনো খেলনা রাখা যাবে না যা থেকে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। এ কক্ষে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট শিশু ও তাদের মায়েরা প্রবেশ করতে পারবেন; বাইরের ব্যক্তিদের যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
নিরাপদ “ফিডিং” প্রদানের জন্য আলাদা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিশুদের দেখাশোনা ও যত্নের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আয়া নিয়োজিত থাকতে হবে। শু পরিচর্যা কেন্দ্রের কক্ষটি নিয়মিত কর্তব্যরত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পরিদর্শন করতে হবে। চিকিৎসক শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াও কক্ষের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে যথাযথ পরামর্শ দেবেন।
মেডিকেল রুম (Medical Room):
মেডিকেল রুম সর্বদা পরিষ্কার, সুসজ্জিত ও সুসংগঠিত রাখতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ঔষধপত্র, সরঞ্জাম এবং উপকরণ সময়মতো সঞ্চয় ও রিফিল করতে হবে। মেডিকেল রুমে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সহায়ক কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় বসার ও কাজ করার জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি অবস্থায় দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য মেডিকেল রুমের প্রবেশপথ অবাধ ও সিগনেজসহ সুপরিচিত থাকতে হবে। মেডিকেল রুমে থাকা সকল চিকিৎসা সামগ্রীর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বাতিল করার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
মেডিকেল রুমে সর্বদা পরিষ্কার পানি এবং প্রয়োজনীয় হাইজিন সামগ্রী যেমন সাবান, স্যানিটাইজার ইত্যাদি রাখা বাধ্যতামূলক। চিকিৎসা রুম নিয়মিতভাবে কর্তব্যরত চিকিৎসক বা স্বীকৃত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দ্বারা পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের প্রবেশ রোধ করতে হবে এবং কেবলমাত্র অনুমোদিত কর্মী ও রোগীদের জন্য প্রবেশাধিকার দিতে হবে। চিকিৎসা রুমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবশ্যকীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
খাবার কক্ষ (Dining Area):
খাবার কক্ষ সর্বদা পরিষ্কার, গোছানো ও হাইজেনিক রাখতে হবে। টেবিল, চেয়ার, এবং অন্যান্য আসবাবপত্র নিয়মিতভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। খাবারের বর্জ্য ও আবর্জনা অবিলম্বে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে এবং সেখানে ময়লা জমতে দেয়া যাবে না। খাবার পরিবেশন ও গ্রহণের জায়গা আলাদা রাখতে হবে, যাতে কোনো ধরনের মিলমিশ বা দূষণ না ঘটে।
খাবার কক্ষে পানির যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে কর্মীরা সহজেই হাত ধুতে পারে। খাবারের সময় এবং পরে খাবার কক্ষের স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে ক্লিনারগণ নির্ধারিত সময়ে দায়িত্ব পালন করবেন। খাবার কক্ষে কোনো প্রকার অজ্ঞান বা অস্বাস্থ্যকর বস্তু রাখা যাবে না। কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খাবার কক্ষে পরিষ্কার তোয়ালে ও ন্যাপকিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। খাবার কক্ষে প্রবেশের সময় সঠিক পোশাক ও হাইজিন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। খাবার কক্ষে ধূমপান ও অন্য কোন অপ্রয়োজনীয় কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
প্রশ্রাব পায়খানা (Toilet Facilities):
সমস্ত টয়লেটসমূহ সর্বদা অত্যন্ত পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। টয়লেটের মেঝে এবং কমোড নিয়মিত ঘষে-মেজে পরিষ্কার করতে হবে। হাত ধোয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সাবান এবং পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। টয়লেটে পর্দার ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক, যা ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করবে। টয়লেট পরিষ্কারের দায়িত্বে নিয়োজিত ক্লিনারদের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক তদারকি করতে হবে, যাতে কোনো শিথিলতা বা অবহেলা না হয়। টয়লেটের ডাস্টবিনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার ও খালি রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় তোয়ালে ও লাইটের ব্যবস্থা টয়লেটে রাখতে হবে এবং তা সার্বক্ষণিক সচল রাখতে হবে।
সাধারণ নির্দেশনা ও অন্যান্য নীতিমালা (General Guidelines & Others):
সকল ফ্লোর, ফ্যাক্টরীর আঙিনা, সিঁড়ি, লিফ্ট, অফিস কক্ষ, টয়লেট, বাথরুম, ডাইনিং হলসহ সকল জায়গা সর্বদা সাজানো, গোছানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারখানায় ব্যবহৃত সুতা, গার্মেন্টস বডি ও ডেমেজ বডি মেঝের উপর যত্রতত্র ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। অগ্নি নির্গমন পথ সবসময় পরিষ্কার ও অবাধ রাখতে হবে; নির্গমন পথের উপর কোনো বস্তু রাখা যাবে না। কারখানার সকল স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং কারখানার সুইচ বোর্ডের আশপাশ পরিষ্কার ও বাধামুক্ত রাখতে হবে। থু থু, কফ ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হবে; যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। অগ্নি নির্বাপক কর্মী, প্রাথমিক চিকিৎসক দল এবং ঝাড়ুদারগণ নিজ নিজ নির্দিষ্ট পোষাক পরিধান করছেন কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।