একটি লাইনের কোয়ালিটি এনসেওর না হওয়ার রুটকজ গুলো এক নজরে I How to Garments Line-Quality Ensure

একটি লাইনের কোয়ালিটি এনসেওর না হওয়ার রুটকজ গুলো এক নজরে I Garments Line-Quality Ensure 

একটি লাইনের কোয়ালিটি এনসেওর না হওয়ার রুটকজ গুলো এক নজরে I Garments Line-Quality Ensure
"এক লাইনের কোয়ালিটি এনশিওর না হওয়ার পেছনের মূল রুটকজসমূহ—এক নজরে জেনে নিন!"

"মানুষ যেমন কোয়ালিটি ফুল হতে পারে, পোশাকও তেমন কোয়ালিটি ফুল হতে পারে"। আর এই তুলনা সত্যিই মনের মধ্যে গভীর আলোড়ন তোলে।

👕 পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি দরকার কেন?

একটা পোশাক যত সুন্দরই হোক, যদি সেলাই খারাপ হয় বা ফ্যাব্রিক ফেটে যায়—ক্রেতা সেটা ফেরত দেবে বা ব্র্যান্ড বদলে দেবে। তাই কোয়ালিটি মানে হলো ক্রেতার আস্থা ও সন্তুষ্টি। বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ড (H&M, Zara, Uniqlo) কোয়ালিটি ছাড়া কিছুই নেয় না। একটি ছোট QC ত্রুটি মানেই হতে পারে অর্ডার বাতিল, পেমেন্ট বন্ধ, এমনকি বিজনেস লস। কবার পোশাকে ভুল হলে সেটা রিপেয়ার বা রিমেক করতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। তাই প্রোডাকশনের সময়েই QC ঠিক থাকলে অতিরিক্ত খরচ ও রিটার্ন এড়ানো যায়। একটা ছোট QC ভুলে পুরো ব্র্যান্ডের বদনাম হতে পারে। 

তাই প্রতিটি পিস যেন “গর্বের সঙ্গে” বাজারে যাই, সেটা নিশ্চিত করে কোয়ালিটি। বায়ারের বিশ্বাস ও দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক রাখতে, যে ফ্যাক্টরি বারবার কোয়ালিটি দিয়ে প্রমাণ রাখে, বায়ার তাদের কাছে বারবার ফিরে আসে। কোয়ালিটি মানে হলো দীর্ঘমেয়াদী অর্ডার ও বিজনেস গ্রোথ। শ্রমিক ও কর্মীর দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক, QC ফলো করলে ও নিয়মিত ইনলাইন ইনস্পেকশন থাকলে শ্রমিকরাও আরও সচেতন ও দক্ষ হয়।

"কোয়ালিটি শুধু পোশাকের বিষয় নয়, এটা কোম্পানির ভবিষ্যতের প্রশ্ন।"

কোয়ালিটি মানে—নির্ভরতা, সম্মান, আস্থা, ও লাভ।

একজন পোশাক কারখানার মালিক হিসেবে সুনাম অর্জন করতে হলে পণ্যের কোয়ালিটি অবলম্বন করতে হবে। কোয়ালিটি শুধুমাত্র পণ্য নয়, বরং পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া, কারখানার পরিবেশ, শ্রমিকদের দক্ষতা, এবং কর্মস্থলের শৃঙ্খলা সমস্ত কিছু প্রভাবিত করে।

চল, দেখি কিভাবে একজন পোশাক কারখানার মালিক সুনাম অর্জন করতে পারে এবং সেই সুনাম দীর্ঘস্থায়ী হবে।

পোশাক কারখানার সুনাম অর্জনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেবেন?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পণ্যের কোয়ালিটি। যদি পণ্যই মানসম্মত না হয়, তাহলে কোনো প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন কাজ করবে না। পণ্যের উপাদান (ফ্যাব্রিক, সেলাই, ডিজাইন, ফিনিশিং) সবকিছুর মান উচ্চতর হতে হবে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেম সঠিকভাবে কার্যকরী হওয়া উচিত। বিশ্বস্ততা হচ্ছে সুনাম অর্জনের মূল চাবিকাঠি। নিয়মিত সঠিক ডেলিভারি, ভালো যোগাযোগ, এবং পণ্যের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেই আপনি আস্থা অর্জন করতে পারেন। ক্লায়েন্টদের প্রয়োজনীয়তা বুঝে প্রোডাকশন করতে হবে। প্রতি অর্ডারের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কোয়ালিটি নির্ধারণ না করলে, আপনি নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং দৃষ্টি রাখতে পারবেন না।

শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন: এককথায়, শ্রমিকরা যত দক্ষ, তত ভালো কোয়ালিটি পণ্য উৎপাদন হবে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সতর্ক নজরদারি ও সুস্থ পরিবেশ তাদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।প্রযুক্তির ব্যবহার: আধুনিক প্রযুক্তি এবং মেশিনারির ব্যবহার ফ্যাক্টরি কার্যক্রমে আরও সুচারুতা আনবে। কর্ম পরিবেশ: কারখানার কর্মস্থলে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরির মাধ্যমে আপনি নিজের কারখানাকে আলাদা করে তুলতে পারেন।

স্বতন্ত্র ফিচার বা বিশেষ কোয়ালিটি এর মাধ্যমে সুনাম লাভ করা সহজ। ব্র্যান্ডিং শক্তিশালী করতে হবে যাতে আপনার কারখানা ‘বিশ্বস্ততার’ প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতি অর্ডারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে। 

অর্ডার ডেলিভারি সময়মতো হলে গ্রাহকের মনোভাব ইতিবাচক থাকে এবং পরবর্তী অর্ডারের সম্ভাবনা বাড়ে। একটি পোশাক কারখানার সুনাম শুধু কোয়ালিটির মাধ্যমে নয়, বরং নতুনত্ব আনার মাধ্যমে পাওয়া যায়। নতুন ডিজাইন বা আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা এবং নতুন ট্রেন্ড তৈরি করা গ্রাহকদের কাছে আকর্ষণীয়। গ্রাহকদের ফিডব্যাক শুনুন, তাদের সমালোচনা ও প্রশংসাকে গুরুত্ব দিন। ডব্যাকের ভিত্তিতে পণ্যের উন্নতি ঘটাতে হবে এবং প্রয়োজনে বাজার গবেষণা চালাতে হবে।

অংশগ্রহণ করুন এবং পুরস্কৃত হন বা ইন্ডাস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করুন, যা আপনার পণ্যের গুণগত মানের জন্য স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে। আপনার কারখানা অফিসিয়াল সার্টিফিকেশন বা স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন (যেমন ISO) থেকে অনুমোদন পেলে সুনাম আরও বাড়বে। শুধু ব্যবসায়িক সফলতা নয়, সামাজিক দায়িত্ব পালন করাও কারখানার সুনাম বৃদ্ধি করে। পরিবেশের প্রতি সচেতনতা, শ্রমিকদের কল্যাণ এবং সামাজিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করলে ব্র্যান্ডের ইমেজ আরও ভালো হবে।

সুনাম অর্জন করতে হলে 'কোয়ালিটি' আপনার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার!

একটা পোশাক কারখানার জন্য কোয়ালিটি এমন একটা অস্ত্র, যা আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতি ও সুনাম দুইই স্থায়ী করবে। একটা ছোট ফাঁকও ধরা পড়লে, সেটা পুরো শিল্পের সম্মান এবং ব্যবসায়ের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

কোয়ালিটি সত্যিই আস্থা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আপনি যেমন বললেন, মার্কেটে গিয়ে আপনি কখনোই খারাপ কোয়ালিটির কিছু কিনতে চাইবেন না, তেমনি আপনার পণ্য বা সার্ভিস যদি ভালো কোয়ালিটির না হয়, তবে ক্রেতা আপনাকে কেন বিশ্বাস করবে? এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হতে পারে, বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে যেখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।

কোয়ালিটি মানে শুধুমাত্র একটি ভালো পণ্য দেওয়া নয়, বরং ক্রেতার কাছে বিশ্বাস এবং প্রসন্নতা সৃষ্টি করা। যদি আপনি বিশ্বস্ততা এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক তৈরি করতে চান, তবে আপনার কোয়ালিটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে কোয়ালিটি কেবল পণ্যই নয়, এর সাথে সংযুক্ত সবকিছু—গ্রাহক সেবা, ডেলিভারি টাইম, পরিবহন এবং প্যাকেজিং—এই সবকিছুই একটি বড় মিলিত প্রক্রিয়া যা পুরো অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করে।

কোয়ালিটি অর্জন করতে হলে কিছু কৌশল:

একটানা কোয়ালিটি বজায় রাখতে, উৎপাদন প্রক্রিয়া যেন নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করে। কাঁচামাল, মেশিন ও প্রযুক্তি যে প্রতিষ্ঠান বা সরবরাহকারীর মাধ্যমে আসবে তা যেন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য হয়। দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষিত কর্মী আপনার কোয়ালিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।য়মিত ইনলাইন ও ফাইনাল ইনস্পেকশন কর্মী দ্বারা পরীক্ষা করে যাতে ত্রুটি কম হয়। গ্রাহকের কাছ থেকে সঠিক ফিডব্যাক নিয়ে আপনি কীভাবে আপনার পণ্যের মান আরও উন্নত করতে পারেন তা জানুন।

আপনার ব্যবসার সুনাম নিশ্চিত হবে যখন:

  • ক্রেতারা আপনাকে বিশ্বাস করবে

  • তারা আপনার পণ্যের বিশ্বস্ত গুণমান জানবে

  • আপনার পণ্যের সাথে সন্তুষ্ট হয়ে তারা আবার আপনার কাছ থেকে কিনতে চাইবে

  • আপনার প্রতিষ্ঠান ভালো রিভিউ পাবে এবং বাজারে কথা হবে যে, আপনার প্রতিষ্ঠান শুধু ভালো মানের পণ্যই দেয়

পোশাক শিল্পে কোয়ালিটি (গুণগত মান) আসলেই একটি প্রতিষ্ঠান বা কারখানার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। যেমন আপনি বললেন, বায়াররা তাদের অর্ডার দেওয়ার আগে প্রথমেই দেখে যে কোম্পানির কোয়ালিটি কতটা ভালো, এবং এটাই তাদের সিদ্ধান্তের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কোয়ালিটির গুরুত্ব বায়ারের দৃষ্টিতে:

বায়াররা যখন একটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা চায় যে সেই কোম্পানি বিশ্বস্ত এবং সর্বদা নির্ভুল কোয়ালিটি দেবে। এটা তাদের ব্র্যান্ড এবং ইমেজের সাথে সম্পর্কিত। ফিনিশ গার্মেন্ট রিওয়ার্ক বা রিজেক্ট হওয়া, যেমন আপনি বলেছেন, বাড়তি খরচ এবং সময়ের অপচয় হয়। এ ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে, ফার্স্ট টাইম রাইট কোয়ালিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, প্রথম বারেই মানসম্পন্ন পণ্য প্রস্তুত করা উচিত। যদি পোশাকের কোয়ালিটি শুরু থেকেই ঠিক থাকে, তাহলে কোম্পানির খরচ কমবে এবং লাভ বৃদ্ধি পাবে। একটি পোশাক যখন প্রথমবারেই ফাইনাল হয়, তা ম্যানেজমেন্টের অতিরিক্ত খরচ কমাবে। অন্যদিকে, রিওয়ার্ক বা রিজেকশন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।

কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে কার্যকরী ভূমিকা: 

কোয়ালিটি শুধুমাত্র উৎপাদন পর্যায়ের বিষয় নয়, এটি ম্যানেজমেন্ট স্তর থেকেও শুরু হয়। যদি ম্যাক্সিমাম মনোযোগ এবং স্বচ্ছতা থাকে, তবে কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পাবে। যে সোর্স থেকে কাঁচামাল বা উপকরণ আসছে, সেখানে থেকেই কোয়ালিটি মাইন্ডসেট তৈরি করতে হবে। একটি ভালো পোশাক তৈরি হওয়ার প্রথম ধাপটাই হচ্ছে কাঁচামালের নির্বাচন। 

যদি কাঁচামাল ভালো হয়, তবেই পরবর্তী পর্যায়ে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি কর্মী যদি জানে যে, কোয়ালিটি তার কাজের মূল অংশ, তবে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবে। কর্মীদের প্রতি নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং তাদের মধ্যে কোয়ালিটি সচেতনতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। ইন-লাইন কোয়ালিটি চেকিং, ফাইনাল কোয়ালিটি চেকিং এবং সম্ভাব্য ত্রুটি নির্ধারণের জন্য দক্ষ কিউসি (Quality Control) টিম থাকা প্রয়োজন। যেকোনো ত্রুটি উৎপাদন পর্যায়ে ধরতে পারলে, পরে তা রিজেক্ট বা রিওয়ার্ক থেকে রক্ষা পাবে।

কোয়ালিটি মাইন্ডসেট - একে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন?

প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব বা ম্যানেজমেন্টের অবস্থান থেকেই কোয়ালিটি নিয়ে চিন্তা করা শুরু হয়। মাইন্ডসেট প্রতিষ্ঠার জন্য, ম্যানেজমেন্টকে নিজের উদাহরণ তৈরি করতে হবে। কোয়ালিটি শুধু একটি কাজের অংশ নয়, এটি একটি সংস্কৃতি। কোম্পানির সমস্ত স্তরে কোয়ালিটির গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং সবাইকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে শেখাতে হবে।

পোশাক কারখানার মধ্যে কোয়ালিটি নিশ্চিত করার বড় একটি কারণ হল কাজের প্রতি দায়িত্ববোধের অভাব, যা সাধারণত নিজস্ব মালিকানা বা মনোযোগের অভাবের কারণে ঘটে।

যখন আমরা আমাদের নিজস্ব পোশাক তৈরি করতে দর্জির কাছে যাই, তখন আমরা তাকে বিশেষ নির্দেশনা দেই, এবং তাকে বলি যে কোনও ত্রুটি হলে, পোশাকটি গ্রহণ করা হবে না। কিন্তু যখন আমরা পোশাক কারখানার কর্মী হিসেবে কাজ করি, তখন সেই মনোভাবটা আর থাকে না, কারণ আমরা সেটা নিজস্ব কিছু মনে করি না

কাজের মালিকানা বা দায়িত্ববোধের অভাবের সমস্যা:

দর্জির কাছে গিয়ে নিজের পোশাক বানানোর সময় আমরা সেই পোশাকের জন্য পূর্ণ মনোযোগ এবং যত্ন নিই। কিন্তু পোশাক কারখানায় কাজ করার সময় অনেক কর্মী তাদের দায়িত্ব নিয়ে সঠিক মনোভাব দেখান না, কারণ তারা সেটা নিজস্ব কিছু মনে করে না।যখন কাজটি নিজস্ব পণ্য না হয়ে চাকরি বা দৈনিক কাজ হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেই কাজের প্রতি মনোযোগ এবং আগ্রহের অভাব দেখা যায়। ফলস্বরূপ, কোয়ালিটি নিয়েও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয় না। যখন একজন মানুষ কাজটিকে নিজের মনে করেন, তখন তিনি সেই কাজের প্রতি প্যাশন এবং দায়িত্বশীলতা দেখান। কিন্তু পেশাদার জীবন বা চাকরির ক্ষেত্রেও, যদি এই মনোভাব না থাকে, তবে কাজের গুণগত মান প্রভাবিত হয়।

কীভাবে এই মনোভাব বদলাতে হবে?

প্রত্যেক কর্মীকে তার কাজের প্রতি নিজের মালিকানা বা অংশীদারি অনুভব করানো উচিত। যদি একজন কর্মী মনে করেন যে, "আমি যে পোশাকটি তৈরি করছি, সেটা আমারই কাজ", তখন তার কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পাবে। কর্মীদের মাঝে কাজের প্রতি আগ্রহ এবং প্যাশন সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ এবং প্রেরণা খুবই জরুরি। তাদের বোঝাতে হবে যে, তাদের কাজ শুধুমাত্র একটি চাকরি নয়, বরং এটি তাদের অংশীদারি বা অবদান

শুধুমাত্র দক্ষতা নয়, বরং কোয়ালিটি কন্ট্রোল (QC) প্রক্রিয়া এবং তার অভ্যন্তরীণ মূল্য সম্পর্কে কর্মীদের সচেতন করা উচিত। কাজের মান বৃদ্ধির জন্য সেই কাজের প্রতিটি পর্যায়ে কর্মীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন কর্মী যদি তার কাজের প্রতি আগ্রহী হয়, তবে তিনি সেই পোশাককে এমনভাবে তৈরি করবেন যে, তাকে মনে হবে যেন এটি তার নিজের তৈরি পোশাক। এই মনোভাব তৈরি হলে, কাজের কোয়ালিটি স্বাভাবিকভাবেই উন্নত হবে।

যখন আমরা আমাদের কাজটিকে নিজের কাজ মনে করি, তখন আমাদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা এবং স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব তৈরি হয়। এভাবেই আমরা একজন কোয়ালিটি ফোকাসড প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি, যেখানে প্রত্যেক কর্মী তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, এবং পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত হয়।

যদি আপনি শরীরের একটি অংশের যত্ন না নেন, তবে সম্পূর্ণ শরীর ভালো থাকতে পারে না। একটুকু সমস্যা থাকলে তা গোটা শরীরের উপর প্রভাব ফেলবে, ঠিক যেমন পোশাকের ক্ষেত্রে—একটি ছোট ত্রুটিও গোটা প্রোডাক্টের মানে প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রকৃত কোয়ালিটি অর্জনের জন্য মাইন্ডসেটের গুরুত্ব:

কোয়ালিটি কেবল শর্তের মধ্য দিয়ে আসবে যদি আমরা শুরু থেকেই একে অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করি। মানে, একটি পোশাক তৈরির পুরো প্রক্রিয়া থেকেই আমরা নিশ্চিত হবো যে প্রতিটি অংশের কোয়ালিটি ঠিক আছে। প্রতিটি স্টেপে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ কোয়ালিটি নিশ্চিত করা সম্ভব।  যেমন আপনি বলছেন, যখন বডির সব পার্ট কোয়ালিটি ফোকাস থাকে, তখন পুরো শরীরের কোয়ালিটি ভালো থাকে।

একইভাবে, গার্মেন্টস প্রোডাকশনও একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। প্রতি স্টেপ, যেমন ফ্যাব্রিক চেকিং, কাটিং, সেলাই, ফিনিশিং—প্রত্যেকটি স্টেপে কোয়ালিটি নিশ্চিত করলে, পুরো প্রোডাক্টের কোয়ালিটি বজায় থাকবে।  আপনার কথায় যে "আমরা যা বিশ্বাস করি, তা অর্জন করতে পারি", তা খুবই সত্যি। যদি আমাদের বিশ্বাস থাকে যে, আমরা যে স্টাইল বা প্রোডাক্ট তৈরি করছি, তার কোয়ালিটি শীর্ষে থাকবে, তখন আমরা সেইভাবে কাজ করতে শুরু করি। 

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হলেই কোয়ালিটি নিয়েও কাজের মান পাল্টে যাবে। একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির প্রতিটি সদস্যের, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, দায়িত্বশীল মনোভাব থাকা উচিত। তাদের কাজের প্রতি সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গি যদি কোয়ালিটি ভিত্তিক হয়, তবে তারা শুধু একেকটি টাস্ক শেষ করবে না, বরং তারা পুরো প্রক্রিয়া, প্রোডাক্ট এবং প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ মানের দিকে নিয়ে যাবে।

যতক্ষণ না আমরা নিজে কোয়ালিটির প্রতি বিশ্বাস তৈরি করি, ততক্ষণ কোয়ালিটি আসবে না। যদি আমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করি—আমরা কি আসলেই প্রতিটি প্রোডাক্টের কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে চাই? তাহলে শুরু থেকেই আমাদের মানসিকতা সেটি অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবে। যেমন শরীরের সকল অংশ একযোগভাবে কাজ করে পুরো শরীরকে সুস্থ রাখে, তেমনি আমাদের পোশাক কারখানার প্রতিটি অংশ, প্রতিটি স্টেপ কোয়ালিটি নিশ্চিত করলে, পুরো পোশাকের মানও সেরা হবে।

আমরা অপারেটর সিলেকশনে ভুল করিঃ

যখন অপারেটর সিলেকশনে ভুল হয়, তখন তার ফলাফল অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে, যেমন:

দক্ষতার অভাব:

অপারেটর যদি প্রয়োজনীয় দক্ষতার অধিকারী না হয়, তাহলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ত্রুটি তৈরি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সেলাই বা কাটিংয়ে ভুল হতে পারে, যা পোশাকের আকার, ডিজাইন এবং কোয়ালিটিতে প্রভাব ফেলে। অপারেটরদের স্কিল এবং অভিজ্ঞতা অবশ্যই সঠিকভাবে যাচাই করা উচিত, বিশেষ করে যেখানে পোশাকের নির্দিষ্ট ধরণের কাজ প্রয়োজন।

মনোভাবের অভাব:

একজন অপারেটরের মনোভাবও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি একজন অপারেটর কাজকে নিজস্ব দায়িত্ব হিসেবে না নেয় বা কোয়ালিটি-ফোকাসড না থাকে, তবে কাজের গুণগত মান ব্যাহত হতে পারে। অপারেটরের মধ্যে যদি আন্তরিকতা এবং কোয়ালিটি সম্পর্কে সচেতনতা না থাকে, তবে তারা কাজের প্রতি গাফিলতি করতে পারে। অপারেটরের মনোভাবের উপর ভিত্তি করে তাদের কাজের ফলাফল নির্ভর করে।

নীতির অভাব:

অপারেটরদের কাজের নির্ধারিত মানদণ্ড এবং নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। অপারেটর সিলেকশন প্রক্রিয়ায় তাদের কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রতিটি অপারেটরের কাছে স্পষ্টভাবে সেই নিয়মগুলি তুলে ধরা উচিত।

ফিটনেস ও স্ট্যামিনা:

গার্মেন্টস উৎপাদনে কাজ করার জন্য একজন অপারেটরের শারীরিক অবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে একটানা কাজ করার জন্য তারা কতটা প্রস্তুত এবং শারীরিকভাবে সক্ষম তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যদি অপারেটর শারীরিকভাবে অবস্থা ভাল না থাকে, তাহলে তাদের পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে, বিশেষ করে মানসম্মত কাজের ক্ষেত্রে।

প্রোডাকশন চাপ:

অপারেটর সিলেকশনের সময় যে কাজের চাপ হতে পারে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো উৎপাদনের গতি বা চাপ ভুলভাবে পরিচালিত হলে অপারেটরকে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ভালো কাজ করতে বলা হতে পারে, কিন্তু তারা এর চাপ সামাল দিতে না পারলে কোয়ালিটি হারিয়ে যেতে পারে। সুতরাং সিলেকশনের সময় মোস্ট স্যুটেবল অপারেটর নির্বাচন করা প্রয়োজন, যারা এই চাপ ম্যানেজ করতে পারবে।

প্রশিক্ষণ এবং মনিটরিং:

যে অপারেটরদের নির্বাচিত করা হয়, তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপারেটরের কাজে কোনো ভুল থাকলে সেটি দ্রুত সংশোধন করার জন্য নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। অপারেটরদের নির্ভুলতা এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করলে গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।

সঠিক অপারেটর সিলেকশন এর কিছু টিপস:

অপারেটরের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কে খোঁজ নিন। তাদের যদি কোনও নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতা থাকে, তা মূল্যায়ন করুন। কেবল দক্ষতা নয়, তাদের কাজের প্রতি প্যাশন এবং মনোভাবও বিচার করা উচিত। একজন পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল অপারেটর গার্মেন্টস উৎপাদনে আরও ভালো কোয়ালিটি দিতে পারে। অপারেটরের সাথে ভালো যোগাযোগ এবং টিমওয়ার্ক থাকা প্রয়োজন, যাতে প্রোডাকশন লাইনে কোনো সমস্যা বা সমাধান দ্রুত আলোচনা করা যায়।  অপারেটরের শারীরিক ফিটনেস এবং স্ট্যামিনা পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষত যারা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করবেন। অপারেটরের কাজ মনিটর করা এবং পরবর্তী সময়ে তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ফিডব্যাক প্রদান করা।

প্রত্যেকটি প্রসেসের জন্য সঠিক অপারেটর নির্বাচন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক অপারেটরের উপস্থিতি সরাসরি কাজের কোয়ালিটি এবং পণ্যের মান নিশ্চিত করে। যখন একজন অপারেটরকে তার দক্ষতা অনুযায়ী সঠিক কাজ দেয়া হয় না, তখন ফলস্বরূপ কোয়ালিটি বিঘ্নিত হতে পারে।

এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরা হলো, কেন সঠিক অপারেটর নির্বাচন না করা হলে কোয়ালিটি প্রভাবিত হয়:

১. দক্ষতার অভাব:

যতটুকু জানা গেছে, প্রতিটি প্রসেস এর জন্য নির্দিষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। যেমন, যদি সেলাই বা কাটিং কাজের জন্য অপারেটরকে সঠিকভাবে নির্বাচন না করা হয়, তবে কাজের গুণগত মানে ত্রুটি হতে পারে। বিশেষত ফিনিশিং বা ফিটিং এর মতো কাজে সঠিক অভিজ্ঞতার অপারেটর থাকা উচিত।

২. প্রোডাকশন স্পিড:

যদি অপারেটরের দক্ষতা কম হয়, তাহলে তাকে কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগতে পারে, যা প্রোডাকশন স্পিড কমিয়ে দেয়। একে একে পুরো প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলতে থাকে, এবং এতে কোয়ালিটি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সঠিক অপারেটর থাকলে, সময়মতো কাজ শেষ হবে এবং ত্রুটির সম্ভাবনা কম থাকবে।

৩. ত্রুটি সমাধানে দেরি:

যখন অপারেটর তার কাজের প্রতি দক্ষ হয় না, তখন সঠিক ত্রুটি সমাধান করতে সময় নেয়। যদি অপারেটর একটি ভুল করেন, তবে সেটি দ্রুত সমাধান করা উচিত। কিন্তু সঠিক অপারেটর না থাকলে, ত্রুটি সমাধান করতে দেরি হয় এবং পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।

৪. কোয়ালিটি কন্ট্রোলের গুরুত্ব:

একটি পোশাকের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধাপ থাকে (যেমন—কাটিং, সেলাই, ফিনিশিং, ইত্যাদি)। প্রত্যেকটি ধাপের জন্য সঠিক অপারেটর নির্বাচন না করলে, কোনো এক ধাপে ত্রুটি হতে পারে। এর প্রভাব পুরো পোশাকের কোয়ালিটিতে পড়ে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রক্রিয়াটি সেই ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করার কাজ করে, কিন্তু যদি প্রথম থেকেই সঠিক অপারেটর না থাকে, তবে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৫. মনোভাব এবং মনোযোগের অভাব:

কিছু অপারেটর হয়তো কোয়ালিটির দিকে মনোযোগ দেন না বা কাজের প্রতি তাদের প্যাশন কম থাকে। যদি সেই অপারেটরকে কোনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেওয়া হয়, তবে সেটা কাজের মানে প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক অপারেটর দিয়ে কাজের মান বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব, কারণ তারা কাজের প্রতি সঠিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি রাখে।

৬. উৎপাদন লাইনের ব্যাহত হওয়া:

যখন একটি স্টাইল শুরু করা হয়, তখন যদি প্রতিটি কাজের জন্য সঠিক অপারেটর না থাকে, তবে তা উৎপাদন লাইনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি যদি কোনো এক প্রসেসের অপারেটর ভুল করেন, তবে তা পরবর্তী ধাপের কাজেও প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন— সেলাইয়ের ত্রুটি ফিনিশিং বা প্যাকিং পর্যায়ে ধরা পড়তে পারে, যা পুরো কাজের গুণগত মানে প্রভাব ফেলবে।

সঠিক অপারেটর নির্বাচন করার টিপস: 

প্রতিটি প্রসেস এর জন্য নির্দিষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, তাই অপারেটরকে সেই অনুযায়ী নির্বাচন করুন। উদাহরণস্বরূপ, ফিনিশিং বা কাটিং এর জন্য অভিজ্ঞ অপারেটর নির্বাচন করা উচিত। যেসব অপারেটর কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে দক্ষ, তাদের আগে প্রশিক্ষণ দিন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মাইন্ড সেট করা উচিত যাতে তারা কাজের প্রতিটি ধাপে মান বজায় রাখে।

 অপারেটরদের কাজের প্রতি প্যাশন এবং কোয়ালিটির প্রতি মনোভাব থাকতে হবে। এর জন্য তাদেরকে সঠিকভাবে নির্দেশনা এবং পরিবেশ দিতে হবে যাতে তারা নিজেদের কাজকে নিজের মনে করে। নিয়মিত মনিটরিং ও ফিডব্যাক সিস্টেম থাকলে, অপারেটরদের ত্রুটি বা ভুল দ্রুত ধরতে পারা যায় এবং তাদের সঠিক গাইডলাইন দেওয়া যেতে পারে। কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য, প্রতিটি প্রসেসের জন্য সঠিক অপারেটর নির্বাচন করা জরুরি। পাশাপাশি উৎপাদনের প্রথম থেকেই অপারেটরদের সঠিক প্ল্যান অনুযায়ী কাজ দেওয়া উচিত।

অপারেটর নিয়োগ এবং তাদের দক্ষতা সম্পর্কে সচেতনতা পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়ার সফলতার মূল চাবিকাঠি। যখন অপারেটররা সঠিক প্রশিক্ষণ এবং গাইডলাইন পান, তখন তারা তাদের কাজ দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। তবে, যদি এই প্রশিক্ষণ বা সঠিক নির্দেশনা না থাকে, তাহলে তাদের কাজের গুণগত মানে প্রভাব পড়বে, এবং এর ফলে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।

অপারেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন ভুল হয়:

অনেক সময় আমরা অপারেটর নিয়োগের সময় তাদের কাজের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা ঠিকভাবে যাচাই করি না। বিশেষ করে নতুন অপারেটরদের দক্ষতা না জানা থাকলে তাদের কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  অনেক পোশাক কারখানায় অপারেটরদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না, এবং এতে তাদের কাজের গুণগত মান কমে যায়। কাজের শুরুতেই যদি অপারেটরদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়া না হয়, তবে তারা অনেক ভুল করবে, এবং এটি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।  

অনেক সময় স্টাইল শুরু হওয়ার সময়, অপারেটরদের কোয়ালিটি সম্পর্কে ঠিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয় না। এর ফলে তারা যেভাবে মনে করবে কাজ করবে, যার ফলে কোয়ালিটি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই, অপারেটরদের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় না। ফলে তারা কাজের মান নিয়ে অতটা চিন্তা করে না এবং তাদের কাজের গুণগত মান খারাপ হয়ে যায়।

গার্মেন্টস কোয়ালিটি বৃদ্ধির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেওয়া হলো:

প্রাথমিক পর্যায়ে কোয়ালিটি নিশ্চিত করা:

কোয়ালিটি বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে কাঁচামালের নির্বাচন। উচ্চ মানের কাঁচামাল ব্যবহার করা উচিত যাতে ফাইনাল প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ভালো হয়। সরবরাহকারীদের আগে থেকেই যাচাই করে নিন। তাদের ইতিহাস, মান, এবং পরিসেবা সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।

সঠিক প্রশিক্ষণ ও গাইডলাইন:

অপারেটরদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে। তারা যদি কোয়ালিটি কন্ট্রোলের গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং সঠিকভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে কোয়ালিটি ভালো হবে। দক্ষ টেকনিশিয়ানদের সাহায্য নেওয়া উচিত যারা অপারেটরদের সঠিকভাবে গাইড করতে পারে। সঠিক দিকনির্দেশনা কোয়ালিটি বাড়াতে সাহায্য করে।

প্রোডাকশন প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ:

প্রতিটি প্রোডাকশন প্রক্রিয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট SOP থাকা উচিত। এটি নিশ্চিত করবে যে প্রতিটি অপারেটর সঠিকভাবে কাজ করছে। প্রোডাকশন লাইনের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য কাজের ফ্লো এবং প্রক্রিয়া সরলীকৃত করা উচিত।

নির্দিষ্ট কোয়ালিটি চেকিং সিস্টেম:

প্রোডাকশন চলাকালীন সময়ের মধ্যে কোয়ালিটি চেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে সঠিক পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ করা উচিত। প্রতিটি ফিনিশড গার্মেন্টের উপর কোয়ালিটি চেক করুন, যেমন সেলাইয়ের গতি, ফিনিশিং, রঙ এবং সাইজ অনুযায়ী। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আন্তর্জাতিক মান (যেমন ISO, SA8000, BSCI) অনুসরণ করা উচিত। কোয়ালিটি বৃদ্ধির জন্য এই ধরনের স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

মেশিন ও যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে বজায় রাখা:

মেশিনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত করতে হবে, যাতে তাদের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে। যন্ত্রপাতি বা মেশিনের কোনো সমস্যা হলে তা উৎপাদনের গুণমানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। মেশিনের ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ এবং টুলস যেন সঠিকভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করা।

ইনস্পেকশন টিম তৈরি করা:

কোয়ালিটি নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী ইনস্পেকশন টিম গঠন করুন। এই টিমটি পণ্য প্রস্তুত হওয়ার বিভিন্ন ধাপে কোয়ালিটি চেক করবে এবং ফাইনাল প্রোডাক্টের মান নিশ্চিত করবে।

স্টাফদের মনোযোগী করা:

প্রতিটি কর্মীকে কোয়ালিটির গুরুত্ব বোঝান এবং তাকে কোয়ালিটি সচেতন করার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিন। একজন কর্মী যদি বিশ্বাস করে যে, কোয়ালিটি তার কাজের একটি বড় অংশ, তবে তার উৎপাদন দক্ষতা বাড়বে। স্টাফদের কাজের ফলাফল এবং ফিডব্যাক তাদের কাছে পৌঁছানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের আরও উন্নতি করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।

রিভিউ এবং আপডেট সিস্টেম: 

কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রক্রিয়ার নিয়মিত রিভিউ করতে হবে। রিভিউয়ের মাধ্যমে পাওয়া ফিডব্যাক ভিত্তিতে প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রোডাকশন কোয়ালিটি ট্র্যাক করা যেতে পারে। কম্পিউটারাইজড সিস্টেম এবং কোয়ালিটি চেকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে কোয়ালিটি মনিটর করা উচিত।

ক্লায়েন্ট ফিডব্যাক গ্রহণ:

ক্লায়েন্টের কাছ থেকে পাওয়া ফিডব্যাকের ভিত্তিতে উন্নতির সুযোগ খুঁজুন। এটি আপনাকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে এবং পণ্যের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।প্রাথমিক পর্যায়েই কোয়ালিটি চেক করা উচিত। উৎপাদনের মধ্যে ত্রুটি পাওয়া গেলে তা সংশোধন করে রাখা উচিত, যাতে শেষে রিওয়ার্ক এবং রিজেকশন কমে যায়। কোয়ালিটি এবং খরচের মধ্যে সঠিক ব্যালেন্স বজায় রাখা উচিত। উচ্চ কোয়ালিটি পণ্য উৎপাদন করতে হলে, বাজেট এবং কোস্টিং সিস্টেম ভালোভাবে ম্যানেজ করতে হবে।

কোয়ালিটির সুফল ও কুফল:

কোয়ালিটির সুফল ও কুফল সম্পর্কে সকলকে অবগত করতে হবে: 

একটি প্রতিষ্ঠানে গুণগত মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে, গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত হয়, এবং পুনরায় অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি কোয়ালিটি বজায় না রাখা হয়, তাহলে ব্র্যান্ড ইমেজ খারাপ হয়, গ্রাহক হারানো এবং রিওয়ার্ক বা রিজেকশন বাড়ে, যা খরচ বৃদ্ধি করে।

সকল ‘ড়’ মেটেরিয়াল এর ১০০% কোয়ালিটি ইন্সপেকশন নিশ্চিত করতে হবে: 

সমস্ত কাঁচামালের কোয়ালিটি ইন্সপেকশন একেবারে প্রাথমিক স্তরে করা উচিত। যে কোনও ত্রুটি বা সমস্যা তাড়াতাড়ি চিহ্নিত করা হলে তা পরবর্তী স্তরে গিয়ে বড় সমস্যা তৈরি করবে না। ১০০% কোয়ালিটি চেক করার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায় যে, সঠিক মানের কাঁচামাল ব্যবহার হচ্ছে।

কোন একটি স্টাইলের ক্রিটিক্যাল প্রসেস এর অপারেটরদের ভাল ভাবে ঐ প্রসেস বুঝিয়ে দিতে হবে:

যেকোনো ক্রিটিক্যাল বা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া (যেমন সেলাই, ফিনিশিং, কাটা ইত্যাদি) সম্পর্কে অপারেটরদের সঠিকভাবে গাইডলাইন দিতে হবে। তাদের দক্ষতা এবং কোয়ালিটি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য, যেসব অপারেশনগুলোর উপর সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হয়, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো উচিত।

কোন একটি স্টাইলের শুরুতেই প্ল্যান করতে হবে ঐ স্টাইলের কোয়ালিটিতে কি ধরণের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে ঐ অনুপাতে প্রিপারেশন নিয়ে থাকতে হবে:

প্রতিটি স্টাইলের জন্য আগে থেকেই কোয়ালিটির সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা উচিত, যেমন রঙের ভিন্নতা, সেলাইয়ের সমস্যা, বা ফ্যাব্রিকের ত্রুটি। পূর্ব পরিকল্পনা থাকলে সহজে সমস্যাগুলি সমাধান করা যাবে।

ডীফেক্ট ও কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ডসম্পর্কে ভাল জ্ঞান আছে সে রকম কোয়ালিটি ইনস্পেক্টর দিয়ে গার্মেন্টস চেক করাতে হবে। কাজের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে:

দক্ষ কোয়ালিটি ইনস্পেক্টররা ডীফেক্ট শনাক্তকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ থাকা উচিত এবং কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। কর্মক্ষেত্রের পরিচ্ছন্নতা সরাসরি গার্মেন্টস কোয়ালিটির ওপর প্রভাব ফেলে। গার্মেন্টস তৈরির পরিবেশ সুস্থ এবং পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন যাতে কাজের মান উচ্চ হয়।

কাজের জন্য সঠিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার কোরতে হবে:

সঠিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে কাজের মান উন্নত হয় এবং অপারেটররা ভালোভাবে তাদের কাজ করতে পারে। বিশেষত, মেশিন এবং টুলসের অবস্থাও কোয়ালিটির ওপর প্রভাব ফেলে। মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত হওয়া উচিত।

কোন ডীফেক্ট বারবার পেলে দ্রুত তা সমাধান করতে হবে:

বারবার একি ধরনের ডিফেক্ট দেখা দিলে তা গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। এটি অবশ্যই সমাধান করা উচিত, কারণ বারবার একই সমস্যা হওয়া মানে সিস্টেমে কোনো দুর্বলতা বা ত্রুটি রয়েছে। সমস্যাটির মূল কারণ খুঁজে বের করে তা দ্রুত সমাধান করতে হবে।

আমরা বলতে পারি, গার্মেন্ট কোয়ালিটি ফুল তখনই আশা করতে পাড়বো যখন আমাদের মাইন্ড কে আমরা কোয়ালিটি ফুল করতে পারব:

একটি প্রতিষ্ঠানে কোয়ালিটি কেবল মেকানিক্যাল প্রক্রিয়া নয়; এটি একটি মনোভাব। যদি সমস্ত কর্মী ও ম্যানেজমেন্ট কোয়ালিটির প্রতি সচেতন থাকে এবং নিজেদের কাজের প্রতি গর্ব অনুভব করে, তাহলে গার্মেন্টস কোয়ালিটি স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ মানের হবে।


 

Next Post Previous Post